রিদমের ডায়েরি | রানাকুমার সিংহ

প্রতিদিন স্কুল থেকে ফিরে যাবতীয় কাজ সেরে রিদম ডায়েরি আর কলম নিয়ে বসে পড়ে। ওর ডায়েরি অন্য কারো দেখতে মানা। অবশ্য এটা স্কুল ডায়েরি নয়।

৪০

প্রতিদিন স্কুল থেকে ফিরে যাবতীয় কাজ সেরে রিদম ডায়েরি আর কলম নিয়ে বসে পড়ে। ওর ডায়েরি অন্য কারো দেখতে মানা। অবশ্য এটা স্কুল ডায়েরি নয়। এই ডায়েরি লেখা তার চাইই চাই। কোনো কারণে যদি ডায়েরি লেখা মিস হয়, তার মনটা খুবই খারাপ হয়ে যায়।

রিদম ডায়েরিটার শিরোনাম দিয়েছে- প্রতিদিনের দুষ্টুমি। এই ডায়েরির বিশেষ বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, ওরা বন্ধুরা মিলে স্কুলে যে দুষ্টুমিগুলো করে সেগুলোর পুঙ্খানুপুঙ্খ বর্ণনা লিখে রাখা। রিদম আর ওর বন্ধুরা যে কতরকম দুষ্টুমি জানে তার সাক্ষী এই ডায়েরি। মাঝেমধ্যে মায়ের সামনে আলাভোলা ভাব দেখালেও এই ডায়েরির কথা মনে পড়লে তার মুখে একটা দুষ্টু হাসি খেলে।

- Advertisement -

রিদম আর তার বন্ধুরা যে সারাক্ষণ দুষ্টুমি করে তাও নয়, খেলাধুলায়ও বেশ পারদর্শী ওরা। ওরা ছবি আঁকে, গান গায় এমনকি নাটকের অংশবিশেষও করে ফেলে ওরা।

বেশ ক’দিন ধরে রিদমের মন খারাপ। কোভিড-১৯ এর প্রকোপের জন্য স্কুল বন্ধ। রিদমের ডায়েরি লেখাও বন্ধ। বাড়ির সামনের মাঠটা খা খা করছে। কেউ আর খেলতে আসে না। রিদমের মন চায় বিকেলবেলা মাঠজুড়ে দৌড়াতে। বন্ধুদের সঙ্গে হই-হুল্লোড় করতে। ক্রিকেট আর ফুটবল খেলায় মত্ত হতে।

কত আর টিভিতে কার্টুন দেখা যায়। মাঝেমধ্যে রিদমের মনে হয়, মামাবাড়ি গেলে ভালো হতো। মামাদের গ্রামে ভীষণ মজা হয়। কাঁচা আমের অপূর্ব স্বাদ নেওয়া যেত। গ্রামের আলপথ ধরে দৌড়াতে তার খুব ভালো লাগে। কিন্তু, মামাবাড়ি যাওয়ারও উপায় নেই; লকডাউনে সবকিছু বন্ধ।

রিদমের সময় বড় কষ্টে যাচ্ছে। কোভিড-১৯ ভাইরাসটির ওপর ওর খুব রাগ। ঘরের বাইরে যাওয়া যাবে না, যে নো মানুষের কাছ থেকে তিন ফুট দূরত্বে থাকতে হবে, প্রয়োজনে মাস্ক ব্যবহার করতে হবে এবং নিয়মিত সাবান দিয়ে বিশ সেকেন্ড ধরে হাত ধুতে হবে। এসব তার কাছে প্রথম প্রথম কঠিন মনে হলেও এখন সহ্য হয়ে গেছে। কিন্তু তার স্কুলকে সে খুব ফিল করে। রিদম ডায়েরিটা আবার কবে লেখা শুরু করতে পারবে এই চিন্তায় তার কান্না চলে আসে। অপেক্ষায় আছে সে।

এই বিভাগের আরও সংবাদ